ছারপোকা একটি ক্ষুদ্র বিরক্তিকর পরজীবী পোকা, এই পোকাটি মানুষ ও পোষা প্রাণীর শান্তি ও রাতের ঘুম
কেড়ে নেয়। বাংলাদেশের আবহাওয়া ছারপোকার দ্রুত বংশ বিস্তারের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এটি কামড়ে
চুলকানি ও অ্যালার্জিসহ নানান রকমের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। একবার বাসায় ঢুকলে এদের নিয়ন্ত্রণ
করা খুব কঠিন মনে হলেও, ধৈর্যের সাথে, সঠিক পদ্ধতিতে শুধু আপনার বিছানা নয়, পুরো বাসা বা অফিসকে
ছারপোকা থেকে মুক্ত করা সম্ভব।
ছারপোকা বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গাতেই দেখা যায়। সাধারণত নোংরা ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে এরা বসবাস
করে।
ছারপোকা দূর করার জন্য পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরণের ট্রিটমেন্ট নেয়ারও প্রয়োজন
হতে
পারে। এই ব্লগে আমরা ছারপোকা তাড়ানোর জন্য কিছু সহজ, নিরাপদ ও দীর্ঘস্থায়ী কৌশল আলোচনা করব, যা
আপনাকে ছারপোকামুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।
ছারপোকা একটি সাধারণ গৃহস্থালী সমস্যা, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে। এই পোকাগুলো
দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে এবং অপরিচ্ছন্ন স্থানে আকৃষ্ট হয়। তবে, কিছু সহজ ও কার্যকর উপায়ে চিরতরে
ছারপোকা দূর করা সম্ভব। নিম্নে ছাড়পোকা দূর করার বিভিন্ন কার্যকর উপায় উল্লেখ করা হলো:
পুরাতন আসবাবপত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা:
পুরাতন আসবাবপত্র (বিশেষ করে বিছানা, সোফা, ম্যাট্রেস), কার্পেট, জামাকাপড় কেনার বা ব্যবহারের আগে
খুব ভালো করে ছারপোকা আছে কিনা পরীক্ষা করে ক্রয় বা ব্যবহার করুন।
ভ্রমণকালে সতর্কতা:
হোটেল বা অন্য কোথাও থাকার সময় কক্ষে, বিশেষ করে বিছানা, ম্যাট্রেসের সীম, হেডবোর্ড, ফার্নিচারের
জয়েন্টগুলো ভালো করে চেক করুন। লাল-বাদামী দাগ বা ছোট সাদা ডিম দেখতে পান কিনা খেয়াল করুন। ফেরার
পর স্যুটকেসের সব কাপড় তৎক্ষণাৎ গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন।
আসবাবপত্রের ফাঁক ফোকর বন্ধ করা:
দেয়ালের ক্র্যাক, কার্পেটের কিনারা, আসবাবের জয়েন্ট ইত্যাদি ছারপোকার আশ্রয়স্থল। সিলিকন বা
সিল্যান্ট দিয়ে এগুলো বন্ধ করে দিন।
ম্যাট্রেস ও বাক্স স্প্রিং কভার:
বিশেষভাবে ডিজাইন করা ম্যাট্রেস ও বক্স স্প্রিং কভার (জিপারযুক্ত) ব্যবহার করুন। এগুলো ছারপোকাকে
আটকে ফেলে এবং কামড়ানো থেকে বিরত রাখে।
ছারপোকা তাড়ানোর ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক উপায়
ছারপোকা একটি রক্তচোষা বিরক্তিকর পরজীবী প্রাণী। এর উপদ্রব এত মারাত্মক যে এটি অনেকের কাছে একটি
আতঙ্কের নাম। নিম্নে ছারপোকা তাড়ানোর ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক উপায় সম্পর্কে উল্লেখ করা হল:
অতিরিক্ত তাপমাত্রা:
ছারপোকা তাপ সহ্য করতে পারে না। আক্রান্ত কাপড়, চাদর, তোয়ালে, পর্দা ইত্যাদি কমপক্ষে ৬০°C
(১৪০°F) তাপমাত্রার গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন এবং ড্রায়ারে উচ্চ তাপে শুকান। স্টিম ক্লিনার দিয়ে
ম্যাট্রেস, সোফা, কার্পেট, দেয়ালের ক্র্যাক, আসবাবের ফাঁক ভালো করে স্টিম দিন, খেয়াল রাখতে
হবে
স্টিমের তাপ যেন সরাসরি পৃষ্ঠে লাগে।
সূর্যের তাপ:
ছোট জিনিসপত্র (খেলনা, বই ইত্যাদি) পলিথিন ব্যাগে ভরে কড়া রোদে কয়েক দিন রেখে দিন (ব্যাগের
ভেতর তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যাবে)।
ফ্রিজার:
ছোট জিনিসপত্র এয়ারটাইট ব্যাগে ভরে ফ্রিজারে (-১৮°C বা ০°F এর নিচে) কমপক্ষে ৪ দিন রাখুন। তবে
এই পদ্ধতি খুব বেশি কার্যকর নয়।
ডায়াটোমাসিয়াস আর্থ (DE):
এটি এক ধরনের প্রাকৃতিক পাউডার। এটির ধারালো কণাগুলো ছারপোকার শরীর কেটে ফেলে এবং তারা
পানিশূন্য হয়ে মারা যায়। বিশেষজ্ঞরা খাদ্য গ্রেডের DE কেনার পরামর্শ দেয়। এই পাউডারটিকে খুব
পাতলা স্তরে ছারপোকার চলাচলের পথে, যেমন বিছানার পায়ার চারপাশ, কার্পেটের কিনারা, দেয়ালের
ক্র্যাক, আসবাবের নিচে প্রয়োগ করুন।
সতর্কতা:
ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন।
সুগন্ধি ব্যবহার:
কিছু মানুষ নিম তেল, ল্যাভেন্ডার তেল ইত্যাদির গন্ধ ছারপোকা তাড়াতে সাহায্য করে বলে দাবি করেন,
তবে এর বৈজ্ঞানিক প্রমাণ খুব শক্তিশালী নয়। এগুলো প্রতিরোধের জন্য কিছুটা সাহায্য করতে পারে,
কিন্তু ইতিমধ্যে আক্রমণ হলে এতে কাজ হওয়ার সম্ভাবনা কম।
রাসায়নিক পদ্ধতি ছারপোকা তাড়ানোর উপায়
ছারপোকার উপদ্রব বেশি হলে ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক উপায়ে নির্মূল করা যায়না, রাসায়নিক পদ্ধতির
প্রয়োজন।
নিম্নে রাসায়নিক পদ্ধতিতে ছারপোকা তাড়ানোর উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হল:
কন্টাক্ট স্প্রে (Contact Sprays):
বাজারে ছারপোকা মারার জন্য বিভিন্ন স্প্রে পাওয়া যায় যেগুলো সরাসরি পোকাকে স্পর্শ করালে মেরে
ফেলে। এগুলো দৃশ্যমান পোকা মারতে কার্যকর, কিন্তু ডিম বা লুকানো পোকাদের উপর তেমন প্রভাব ফেলে
না।
সতর্কতা:
ব্যবহারের আগে অবশ্যই ব্যবহারবিধি ভালো করে পড়বেন, মাস্ক ও গ্লাভস পরবেন, শিশু ও পোষা প্রাণী
দূরে রাখবেন।
রেসিডুয়াল স্প্রে (Residual Sprays):
এই স্প্রে দীর্ঘদিন সক্রিয় থাকে। ছারপোকা এর সংস্পর্শে আসলে বা হাঁটলে মারা যায়। তবে এগুলো
প্রয়োগ করতে বিশেষ নিয়ম ও সতর্কতা প্রয়োজন। প্রায়শই পেশাদার পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিসগুলো এ
ধরনের পণ্য ব্যবহার করে।
ডাস্ট ও পাউডার (Dusts & Powders):
ডায়াটোমাসিয়াস আর্থ ছাড়াও বাজারে অন্যান্য বিশেষ ডাস্ট পাওয়া যায় (যেমন: সিলিকা জেল
ভিত্তিক) যা ছারপোকার শরীরের আর্দ্রতা শোষণ করে মেরে ফেলে। এগুলো ক্র্যাক, ক্রিভিসেস, বৈদ্যুতিক
আউটলেটের ভেতরে (অত্যন্ত সতর্কতার সাথে) প্রয়োগ করা যায়।
যান্ত্রিক পদ্ধতি ছারপোকা তাড়ানোর উপায়
আজকাল যান্ত্রিক পদ্ধতির মাধ্যমেও ছারপোকা দমন করা হয়। এই পদ্ধতিতে ছারপোকা পুরোপুরি দমন করা না
গেলেও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। নিম্নে জনপ্রিয় ২ টি পদ্ধতি উল্লেখ করা হল:
ভ্যাকুয়াম ক্লিনার:
ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে ম্যাট্রেস, সোফা, কার্পেট, দেয়ালের ক্র্যাক, আসবাবের নিচে ভালো করে
ভ্যাকুয়াম করুন। ভ্যাকুয়াম ব্যাগটি সাথে সাথে সিল করে ময়লার বাক্সে ফেলে দিন বা গরম পানিতে
ধুয়ে ফেলুন।
ডাকটেপ (Duct Tape):
ক্র্যাক বা জয়েন্টগুলোকে ডাকটেপ দিয়ে সিল করে দিতে পারেন, যাতে ছারপোকা বের হতে বা ঢুকতে না
পারে।
পেশাদার পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস এর মাধ্যমে ছারপোকা তাড়ানো
যদি আক্রমণ ব্যাপক হয় বা নিজে নিজে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হন, তাহলে পেশাদার পেস্ট কন্ট্রোল
কোম্পানির সাহায্য নেওয়াই সবচেয়ে কার্যকর ও নিরাপদ উপায়। তাদের কাছে আছে:
ছারপোকা শনাক্ত করার বিশেষ জ্ঞান।
শক্তিশালী ও টার্গেটেড রাসায়নিক ও অন্যান্য পদ্ধতি (যেমন: হিট ট্রিটমেন্ট যেখানে পুরো ঘর গরম
করা হয়)।
সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার (IPM) দক্ষতা।
প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সরঞ্জাম।
কখন পেশাদার পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিসের সহায়তা নেওয়া প্রয়োজন?
অনেক সময় বিভিন্ন ধরণের পদ্ধতি অবলম্বন করেও ছারপোকা পুরোপুরি দমন করা সম্ভব হয়না, তখন পেশাদার
পেস্ট
কন্ট্রোল সার্ভিসের সহায়তা নেয়া জরুরি হয়ে যায়। নিম্নোক্ত অবস্থায় পেশাদার পেস্ট কন্ট্রোল
সার্ভিসের
সহায়তা নিতে হবে:
গুরুতর সংক্রমণ: যদি ছারপোকার সংখ্যা বেশি হয় এবং ঘরের বিভিন্ন স্থানে (বিছানা, আসবাব,
দেওয়াল)
ছড়িয়ে পড়ে, তবে পেশাদার সাহায্য নেয়া প্রয়োজন।
ঘরোয়া পদ্ধতির ব্যর্থতা: ঘরোয়া উপায় (যেমন, স্প্রে, ফাঁদ) ব্যবহার করেও যদি ছারপোকা
নিয়ন্ত্রণে
না আসে।
বারবার ফিরে আসা: ছারপোকা বারবার ফিরে আসে বা তাদের ডিম/লার্ভা নির্মূল করা সম্ভব না হলে
পেশাদার সার্ভিসের সহায়তা নেয়া প্রয়োজন।
স্বাস্থ্য ঝুঁকি: ছারপোকার কামড়ে অ্যালার্জি, চর্মরোগ বা ঘুমের সমস্যা দেখা দিলে।
বড় এলাকা বা বহুতল ভবন: অ্যাপার্টমেন্ট বা বহুতল ভবনে ছারপোকা ছড়িয়ে পড়লে, যেখানে একা
নিয়ন্ত্রণ
কঠিন।
নিরাপদ সমাধানের প্রয়োজন: পেশাদার পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস নিরাপদ এবং কার্যকর রাসায়নিক
ব্যবহার
করে, যা বাচ্চা বা পোষা প্রাণীর জন্য নিরাপদ।
দ্রুত ও টেকসই সমাধান: দ্রুত এবং দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য, বিশেষ করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা
হোটেলে।
উপর উল্লেখিত অবস্থায় পেশাদার পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিসের সহায়তা নেয়া আবশ্যক। Quick Knock Pest Control Ltd
বাংলাদেশে
পেস্ট কন্ট্রোলের জগতে এক অনন্য নাম। তারা গ্যারান্টি সহকারে সততা, দক্ষতা, ও পেশাধারীত্বের সাথে
অনেক বছর সম্মানের সাথে ছারপোকা ছাড়াও অন্যান্য পোকামাকড় যেমন তেলাপোকা, পিঁপড়া, মশা, ইঁদুর ও ছুঁচো দমন করে
আসছে। আপনিও আপনার বাসা বা অফিসকে ছারপোকা দূর করতে নিশ্চিন্তে তাদের সহায়তা নিতে পারেন।
উপসংহার
ছারপোকা সমস্যা অত্যন্ত বিব্রতকর হলেও, সমাধান করা সম্ভব। উপরের পদ্ধতিগুলো ধারাবাহিকভাবে ও সঠিকভাবে
প্রয়োগ করলে এবং প্রয়োজনবোধে পেশাদার সাহায্য নিলে অবশ্যই আপনি আপনার বাসস্থানকে ছারপোকামুক্ত
করতে পারবেন। মনে রাখবেন, সচেতনতা, প্রতিরোধ, ধারাবাহিকতা এবং পেশাদার সাহায্য – এই চারটি বিষয়ই
ছারপোকা দমনের মূল চাবিকাঠি। হতাশ না হয়ে, সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করুন।
ছারপোকা তাড়ানোর উপায় নিয়ে প্রায়শই জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্ন
লাল চাকা চাকা দাগ, তীব্র চুলকানি, একই লাইনে একাধিক কামড় (৩-৫টি)। সাধারণত ঘাড়,
হাত, পায়ে কামড়ের দাগ দেখা যায়।
সরাসরি রোগ ছড়ায় না। তবে চুলকানির ফলে ত্বকে ইনফেকশন, রক্তশূন্যতা বা অনিদ্রা হতে
পারে। অ্যালার্জি থাকলে ঝুঁকি বেশি।
বাংলাদেশে কৃষি উপকরণের দোকান (যেমন: বাজারে সারের দোকান), অনলাইন শপ বা পেস্ট
কন্ট্রোল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানে খাদ্য-গ্রেড DE পাউডার পাওয়া যায়। দাম: ২০০-৫০০
টাকা/কেজি।
অন্তত ৬০°C তাপমাত্রায় ৩০ মিনিট ধুয়ে উচ্চ তাপে শুকাতে হবে। কম তাপে ডিমের ক্ষতি
হয়না, এই ডিম থেকে আবার ছারপোকা হতে পারে।
অস্থায়ী সমাধান। সরাসরি স্প্রে করলে কিছু পোকা মারা যাবে, কিন্তু ডিম বা লুকিয়ে
থাকা পোকায় তেমন কাজ করেনা। অতিরিক্ত এলকোহল ব্যবহার করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।